ফয়সাল আহম্মেদঃ বগুড়ার সোনাতলা প্রেসক্লাবের অর্থ কেলেঙ্কারি সহ নানা অনিয়মের দায়ে সভাপতির পদ হারিয়েছে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা এবং বাংলা টিভির সাংবাদিক ইমরান হোসাইন লিখন। তার বিরুদ্ধে প্রেসক্লাব সংক্রান্ত নানা অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হলে গত ৪ অক্টোবর শুক্রবার প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হয়। এঘটনায় সাংবাদিক মহল সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ হতভম্ব হয়।
গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তের হামলায় সোনাতলা প্রেসক্লাব ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় হামলা ও লুটপাট কারীদের চিহ্নিত করার পরও মামলা নিয়ে নানা তালবাহানা সহ দিনের পর দিন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে সভাপতি ইমরান হোসাইন লিখন। সুধু তাই নয় সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার পরিবর্তে সময়ক্ষেপণ, অবহেলা ও অসহযোগিতা করে চলছিলেন তিনি।
এদিকে প্রেসক্লাবের অগোছালো পরিবেশের কারনে সেটি সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়ে। তাই প্রেসক্লাব সংস্কারের জন্য আর্থিক প্রয়োজনের স্বার্থে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ লতিফুল ইসলামের নির্দেশে সদস্যগন সোনালী ব্যাংকে প্রেসক্লাবের একাউন্টের খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো প্রেসক্লাবের একাউন্টে থাকা লক্ষাধিক টাকার পরিবর্তে মাত্র ৭ হাজার ৭শ থেকে ৮শ টাকা রয়েছে বলে ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায়।
ব্যাংক স্টেটমেন্টে জানা গেছে প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমরান হোসাইন লিখন সাবেক সভাপতি নিপুণ আনোয়ার কাজলের সাথে যোগসাজশ করে প্রায় ৬ মাস পুর্বে একমোটে ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। যা কোন সদস্যকে অবগত করা হয়নি এবং নিয়ম অনুযায়ী রেজুলেশন করার কথা থাকলেও তার কোন অস্তিত্বই দেখা মেলেনি। যদিওবা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যাংক একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করবে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সভাপতি ইমরান হোসাইন লিখন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলামকে বিয়োজন করে এককভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছিলো।
আরো জানা যায় সকলের অগোচরে লুকিয়ে চুরি করে তোলা প্রেসক্লাবের অর্থ (৮০ হাজার টাকা) সভাপতি ইমরান হোসাইন লিখন তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছে। প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার এ কার্যক্রম সম্পুর্ণই বেআইনি ও পদ ক্ষমতার অপব্যবহার।
ইমরান হোসাইন লিখনের চুরি করে প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রতিটি সদস্যের মধ্যে উন্মোচিত হলে সকলেই প্রেসক্লাবের সার্বিক বিষয়ে তদারকি করে। এতে প্রেসক্লাবের অর্থ সংক্রান্ত আরো বিভিন্ন গরমিল দেখা মেলে। প্রেসক্লাবের নির্বাচনকালীন সময়ে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন সংক্রান্ত বিষয়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সকল পদের জন্য টাকা জমা নেয়া হলেও হিসাব নিকাশে তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়াও প্রেসক্লাবের সকল সদস্যদের মাসিক চাঁদার একবছরের হিসাব অনুযায়ী ১৮ হাজার টাকারও কোন হিসাব পাওয়া যায়নি তার কাছে। প্রেসক্লাবের অর্থ কেলেঙ্কারিসহ সভাপতির পদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত ছিল ইমরান হোসাইন লিখন। প্রেসক্লাব ভাংচুরের ঘটনায় সংস্কার কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন সোনাতলা রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সেই অর্থেরও কিছু টাকা এখনও সে তার নিজের পকেটে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রেসক্লাবের অর্থের হিসাব গড়মিল থাকায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ লতিফুল ইসলাম অর্থ আত্মসাতকারী অভিযুক্ত ইমরান হোসাইন লিখনকে বারবার প্রেসক্লাবের সভায় উপস্থিত থাকতে তাগিদ দেন। এরপর অভিযুক্ত ইমরান হোসাইন লিখন সাধারন সম্পাদকের সাথে একমত পোষনের অভিনয় করে প্রায় ৫/৬ টি সভার তারিখ নির্ধারণ করেও বিভিন্ন পাঁয়তারার আশ্রয় নিয়ে সভায় অনুপস্থিত থেকে দুর থেকেই বিভিন্ন কলা কৌশলে তা ভণ্ডুল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যায়। ফলে সর্বশেষ সাধারণ সভায় প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসক্লাবের অর্থ কেলেঙ্কারি সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ইমরান হোসাইন লিখনকে সভাপতির পদ থেকে বহিস্কার করেন উক্ত সভার সভাপতি ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম।